কোনো সন্দেহ নেই—রিজিকের সিংহভাগ ব্যবসার মধ্যে। নবি-রাসূল থেকে শুরু করে জগতের মহৎ ব্যক্তিগণের অনেকেই ব্যবসার সাথে সম্পৃক্ত ছিলেন। সাধারণত ব্যবসায়ীগণ চাকরিজীবীদের চেয়ে সচ্ছল হয়ে থাকেন। তাদের সচ্ছলতার যথেষ্ট কারণ আছে। একটি কারণ হলো—ওয়ার্কিং টাইম। বনিয়াদি ও জাত ব্যবসায়ীরা দিন-রাতে ১৫-১৬ ঘন্টা পরিশ্রম করে থাকেন; মওসুমভেদে তা ১৮ ঘন্টা পর্যন্ত হয়ে থাকে। অপরদিকে চাকরির ওয়ার্কিং টাইম কত? সাধারণত ৮-১২ ঘন্টা। ১২ ঘন্টার আয় কখনো ১৮ ঘন্টার সমান হতে পারে না। তাই চাকরির ওপর ব্যবসার প্রাধান্য সব সময়ই ছিল, আছে আর থাকবে। বণিক শ্রেণির সামাজিক মর্যাদা উচ্চ শ্রেনিতে। ইদানীং তারা আমেরিকা থেকে বাংলাদেশ পর্যন্ত রাজনীতি ও সরকার ব্যবস্থাও নিয়ন্ত্রণ করছে।
এই চাকচিক্যময় ও জৌলুসে ভরা সেক্টরে ইদানীং আমাদের অগণিত তরুণ পা বাড়াচ্ছেন। উদ্যোক্তা হওয়ার (চাকরি না করে চাকরি দেওয়ার মহান উদ্দ্যেশ্যে) উচ্চাভিলাষী স্বপ্ন-স্বাধ এবং অল্প সময়ে সচ্ছলতা অর্জনের আকাঙ্ক্ষা অনেক তরুণকে প্রায় উন্মাদ করে দিচ্ছে। এই স্বপ্নের পেছনে ছুটতে গিয়ে তারা জীবনযুদ্ধে কিছু মারাত্মক ভুল করে বসে। যেমন-
এক.
ছাত্র জীবনে অর্জিত (নেতৃত্ব+ম্যানেজমেন্ট-এর) অভিজ্ঞতা থেকে তারা ধরে নেন—কর্মজীবনে ব্যবসায়ও তারা অন্যদের চেয়ে যথেষ্ঠ যোগ্যতাসম্পন্ন। তারা কোনো উদ্যোগ নিলে তা সফল হতে বাধ্য; ব্যর্থ হতে পারেই না।
দুই.
সম্পূর্ণ বিনা পুঁজিতে ব্যবসায় নেমে পড়েন। ব্যক্তিগত ও সামষ্টিক পরিচয় কাজে লাগিয়ে মানুষের কাছ থেকে বিপুল পরিমাণ অর্থ সংগ্রহ করেন। ছাত্রজীবনে দীর্ঘদিন ধরে অর্জিত সুনাম ইনভেস্ট করে নানান জনের নিকট থেকে টাকা নেন।
তিন.
একদম বিনা অভিজ্ঞতায় ব্যবসায় শুরু করা হয়। কিন্তু আমরা সবাই জানি—অভিজ্ঞতা ব্যবসায়ের অন্যতম প্রধান শর্ত। ছাত্রবস্থায় কিছু কাজে জড়িত তরুণরা অভিজ্ঞতা শব্দের অপব্যাখ্যা করে।
চার.
কারা মূল মালিক, কারা শেয়ারহোল্ডার—তা নিয়ে স্পষ্টতার অভাব থাকে।
পাঁচ.
সবচেয়ে বড়ো অভাব হয় পরামর্শভিত্তিক কাজের। এমডি বা চেয়ারম্যান নিজের মধ্যে ছাত্রজীবনের ভাব ধরে রাখার সর্বোচ্চ প্রয়াস চালিয়ে যান। তিনি নিজেকে সর্বজ্ঞানী-সবজান্তা ভাবে; অন্যদের/শেয়ারহোল্ডারদের সাথে নিয়মিত বসার এবং পরামর্শ করার প্রয়োজন অনুভব করেন না; ক্ষেত্রবিশেষে নিজের অপরিনামদর্শী সিদ্ধান্ত চাপিয়ে দেন। ফলত প্রথম থেকেই অন্যদের মনে অসন্তোষ দানা বাঁধতে শুরু করে।
ছয়.
ইনসাফভিত্তিক বেতন ও সম্মানী নির্ধারণে চরম বে-ইনসাফের পরিচয় দেন। উদ্যোক্তা ভেবে বাড়তি নানাবিধ সুযোগ-সুবিধা গ্রহণ করেন।
সাত.
অন্যের টাকা এবং অনভিজ্ঞতা দরুন খরুচে অফিস স্পেস, দামী ডেকোরেশন, অতিরিক্ত আপ্যায়নে প্রয়োজনাতিরিক্ত ব্যয় করেন।
আট.
আদতে যা না, তা বলতে ও দেখতে চেষ্টা করেন।
নয়.
আশপাশের লোকজন তাঁকে বড়ো উদ্যোক্তা, বিজনেসম্যান, শিল্পপতি ইত্যাদি বিশেষণে বিশেষায়িত করেন; ফলে তিনি নিজেকে ওয়ারেন বাফেট বা বিল গেটস কিংবা মার্ক জুকারবার্গ ভাবতে শুরু করেন। মনে মনে ও ভাবসাবে অল্পদিনেই তাদের ধরে ফেলার জন্য দিবাস্বপ্ন দেখতে থাকেন।
দশ.
অবাক করা ব্যাপার হলো, সংশ্লিষ্ট ব্যক্তি স্বশরীরে ব্যবসাতে কমই সময় দেন। তিনি ব্যবসার গভীরে যেতে চান না। আশপাশের লোকদের খুব বেশি বিশ্বাস করে তাদের ওপর নির্ভর করতে থাকেন; আর নিজে ব্যবসার পরিচয়ে নাম-ডাক হাঁকান এবং রাজনীতি করে বেড়ান।
এ রকম একটা অবৈজ্ঞানিক ব্যবসায়িক উদ্যোগ শুরুতে আলোড়ন তোলে, চারপাশে রব রব সাড়া পড়ে। দেশ-বিদেশ থেকে ফান্ড আসা শুরু হয়। প্রথম প্রথম সর্বোচ্চ ২-৩ বছর বেতন-ভাতা, লাভ ইত্যাদি ধুমধাড়াক্কা চলে। তবে ব্যবসার লাভ থেকে চলে না, বরং একজনের কাছ থেকে এনে অপরজনকে দেওয়া হয়। টাকা আসার গতি যতদিন থাকে, ততদিন বেসামাল অফিস-আদালত, গাড়ি দৌড়ানো চলতে থাকে। একটা সময় পরে প্রত্যাশা ও প্রাপ্তির গড়মিলের দরুন মানুষের কাছ থেকে টাকা আসার গতি কমতে থাকে। পরিচিত নিকটজনদের কাছে যাতায়াতের রাস্তা ধীরে ধীরে সংকোচিত হতে থাকে। বিনিয়োগকারীদের মোহ ভাঙতে শুরু করে, ইনভেস্ট করে লাখ লাখ টাকা আয়ের ফ্যান্টাসি থেকে তারা সরে পড়ে। এ পর্যায়ে সম্মানিত চেয়ারম্যান-এমডি সাহেব তুলনামূলক দূরের অপরিচিতদের দিকে হাত বাড়াঁর; সঙ্গত কারণেই এখানেও মোহ কাটতে বেশি সময় লাগে না।
এমতাবস্থায় উদ্যোক্তার ওপর চাপ বাড়তে থাকে, মাথায় আকাশ ভেঙে পড়ে। প্রথম কিছুদিন মানুষেরা লাভের আশায় ঘুরাঘুরি করে। কিন্তু অল্প সময়ের ব্যবধানে তাদের হাত মুসাফাহার পরিবর্তে উদ্যোক্তার গালে ওঠে। চোখ উঠে কপালে। তখন চোখে সরিষা ফুল নয়, আস্ত সরিষা খেত দেখতে পান। ধীরে ধীরে অন্যান্য ডাইরেক্টর ও শেয়ারহোল্ডারদের শক্তিশালী বিরোধী গ্রুপ দাঁড়িয়ে যায়। পতন শুরু হয়। অফিস-আদালত, আপ্যায়ন, চলন-বলন সবকিছুতে ভাটার টান শুরু হয়। চেহারার গ্লামার, কালো চুলের ঝিলিক, আচরণের অস্থিরতা ও ভাব, সামাজিক সম্পর্ক—সবখানে আসে আমূল পরিবর্তন। খরচের হাত কমতে থাকে। এ পর্যায়ে এসে সম্মানিত চেয়ারম্যান-এমডি সাহেব কিছুটা ব্যবসা শিখেন বলে মনে করা যায়। কিন্তু ততদিনে দিল্লির লাড্ডু ঢাকার জিনজিরায় পাওয়া যেতে শুরু করে। সবাই উদ্যোক্তাকে খুঁজতে থাকে। নির্বাচনের সময় যেমন প্রার্থী ভোটারদের খোঁজে, এমন সময়ে ঠিক তেমন করে ইনভেস্টরবৃন্দ উদ্যোক্তাকে খোঁজে। ঋণ-ধার ও শেয়ারহোল্ডারদের পাওনা মেটাতে বেচারা উদ্যোক্তা নানান ফন্দি আঁটতে থাকেন। তাঁর অধিকাংশ পরিকল্পনাই তখন বুমেরাং হয়। কারণ, তিনি ইতোমধ্যে অনেকটা ফেরারি জীবনযাপন শুরু করেন। মোবাইল নম্বর পরিবর্তন করেন। অপরিচিত নম্বর রিসিভ করেন না। ফলশ্রুতিতে টেনশন-দুশ্চিন্তা তাঁকে ঘিরে ধরে। একবার ফেরারি হলে যোগ্যতা থাক স্বত্ত্বেও অবস্থার পরিবর্তন করা কঠিন।
এ অবস্থায় একা একা তিনি যেসব চিন্তা ও সিদ্ধান্ত নেন, তার ৯৯%-ই ভুল হয়ে থাকে। তিনি চিন্তা করেন—সময়ের ব্যবধানে সব ঠিক হয়ে যাবে। আপাতত কয়েকটা দিন মোবাইল রিসিভ না করি; হয়তো সবাই বিষয়টা বুঝবে। কিন্তু হিতে বিপরীত হয় তাঁর চিন্তা। শেয়ারহোল্ডাররা অফিসে না পেয়ে তাঁর বাড়িতে চলে আসে। অফি-আদালতে ফোন দিয়ে পরিস্থিতি আরও জটিল করে তোলে। ব্যক্তিগত ও সামষ্টিক সকল পরিসরে বিষয়টি জানাজানি হয়। রাস্তা, অফিস বা ফোনে কোনোভাবে তাঁকে পেলেই শুরু হয় গালাগালি। দীর্ঘদিনের সুসম্পর্ক মুহূর্তে চূড়ান্ত পরিণতি লাভ করে। কেউ একটু বেশি অগ্রসর হয়ে গায়ে হাত তোলে, আদালত পর্যন্ত যান অনেকে। এমতাবস্থায় চেয়ারম্যান-এমডি সাহেব সবচেয়ে বড়ো যে ভুলটি করেন, তা হলো ব্যবসা অব্যাহত না রেখে বন্ধ করে দেন। চাপ সামলাতে আত্মগোপনে থাকায় ব্যবসা ওঠে শিকায়। ফলে প্রাথমিক খরচের টাকার সবটাই গচ্ছা যায়, ব্যবসা মুখথুবড়ে পড়ে।
ব্যবসায়িক উদ্যোক্তারা তখন অনেকটাই মানসিক ভারসাম্যহীন। বেশি প্রেসার ব্যবস্থাপনা পরিচালকের মাথায়; কারণ, লোকজন তাঁকে সামনে দেখেই বিনিয়োগ করেছে। এমন সময়ে কোম্পানির সম্পদ, বাড়ি-গাড়ি বিক্রি করে বেতাল পাওনাদারদের থামানোর চেষ্টা করা হয়। অনেকে পৈতৃক ভিটা-জায়গা জমি বিক্রি করে পরিস্থিতি সামাল দেওয়ার চেষ্টা চালিয়ে যান। এ অবস্থায় তারা আরেকটি বড়ো ভুল করেন। ঋণ করে ঋণ পরিশোধের চোরাবালিতে অনেকে পা বাড়ান। এটিও আরেক ভুল পথ। এক্ষেত্রে ব্যাংক থেকে লোন নেওয়ার সিদ্ধান্ত আত্মঘাতী।
এখন আমি সমস্যা সমাধানের ব্যাপারে কিছু কথা বলতে চাই। পৃথিবীর প্রত্যেকটি সমস্যার নিশ্চয় কোনো সমাধান আছে; প্রয়োজন কেবল সেই সমাধান ঠিকঠাক খুঁজে নেওয়া। ব্যবসায়িক সঙ্কটে যা যা করা যেতে পারে-
এক.
সৎ নিয়তে বক্রতা পরিহার করে খোলা মন নিয়ে পাওনাদার ও শেয়ারহোল্ডারদের সাথে বসা। এভাবে বসলে গালিগালাজ থেকে শুরু করে মার খাওয়ার সম্ভাবনাও উড়িয়ে দেওয়া যায় না। তারপরও বসতে হবে, বসাতেই সমাধান আছে।
দুই.
একাউন্টস ও কোম্পানির সমস্ত সম্পদ-সম্পত্তির ক্ষুদ্রাতিক্ষুদ্র হিসাব কষে বের করা। সম্পদ ও ঋণের পরিমাণ সমান সমান বা কাছাকাছি হলে তো শুকর আলহামদুলিল্লাহ। আর ১০-২০ লাখের পার্থক্য হলে সবার কাছে মাফ চেয়ে নেওয়া এবং একটা উল্লেখযোগ্য অংশ পরিশোধের জন্য ভাগ করে ৫-৭ বছরের লম্বা সময় নেওয়া। আশা করা যায়, বিপদের কথা খোলা মনে বললে অনেকেই মাফ করে দিবে। ব্যক্তি সম্পর্কে স্বচ্ছ ধারণা থাকলে ব্যবসায়িক ক্ষতির ব্যাপারটি অনেকেই মেনে নেবে। অন্ততপক্ষে পরিশোধ করার জন্য লম্বা সময় দেবে।
তিন.
এরপরও ব্যবসা অব্যাহত রাখার ইচ্ছে বা সুযোগ থাকলে পরামর্শভিত্তিক লিখিত রেজুলেশন করে শুরু করা। এক্ষেত্রে একা দায়িত্ব না নিয়ে কয়েকজন দায়িত্ব ভাগ করে নেওয়া। আর ব্যবসার সুযোগ না থাকলে চোখ-কান বন্ধ করে চাকরি খোঁজা, তারও সুযোগ না থাকলে বিদেশ পাড়ি দেওয়ার সিদ্ধান্ত তড়িৎ নিয়ে নেওয়া।
চার.
ব্যবসা/চাকরি/বিদেশ যা-ই হোক না কেন নিজের আরাম-আয়েশ, গাড়ি-বাড়ির মায়া ত্যাগ করে ঋণ-পাওনা পরিশোধের ঈমানী চেতনা নিজের মধ্যে সর্বদা জাগ্রত রাখা।
পাঁচ.
সর্বোপরি আল্লাহর কাছে অবিরত ধরণা দেওয়া। প্রতিনিয়ত দুআ ইউনুস পাঠ করা এবং পাওনা মেটানোর জন্য টাকা ইনকামে মনযোগী হওয়া। হালাল পথে অবারিত জীবিকা নির্বাহের অন্যতম মাধ্যম হলো ব্যবসা। যিনি বুঝেশুনে ব্যবসা করতে যান এবং আল্লাহর অশেষ কৃপায় ব্যবসা যাকে ধরা দেয়, তাঁর জীবনযাপন অনেক সাবলীল হয়ে থাকে। সমাজে তাঁর মান-সম্মান, প্রভাব-প্রতিপত্তি বেড়ে যায়। আর্থিক সচ্ছলতার কারণে তিনি সহজেই সাধারণ মানুষের কাছে যেতে পারেন। তাদের সুখ-দুঃখে অংশগ্রহণ করতে পারেন। অন্যদিকে আর্থিক সংকট মানুষের মনকে মেরে ফেলে, দৃষ্টিভঙ্গি সংকোচিত করে অসামাজিক প্রাণীতে পরিণত করে। অভাব অনেকের স্বভাব-চরিত্র নষ্ট করে ফেলে, অন্যের নিকট হাত পাততে বাধ্য করে। মানুষকে পরিচিতজনদের কাছ থেকে দূরে ঠেলে দেয়।
মানব জীবনে একটা উল্লেখযোগ্য পরিমাণ অর্থের কোনো বিকল্প নাই। আর সঠিক নিয়ম-নীতি ও লেগে থাকার মাধ্যমে যদি ধীরে ধীরে ব্যবসা শুরু ও পরিধি বাড়ানো যায়, তবে ব্যবসায় লোকসান হওয়ার সম্ভাবনা কম। এক্ষেত্রে কতিপয় মূলনীতি ও পূর্বশর্ত মেনে চলা আবশ্যক। যেমন-
এক.
আপনার পড়ালেখা, যোগ্যতা-মেধা, আগ্রহের বিষয় এবং ন্যূনতম অভিজ্ঞতা যে সেক্টরে আছে, ব্যবসা সে সেক্টরেই শুরু করা দরকার। একদমই নতুন এবং কম আগ্রহ আছে— এমন সেক্টর বেছে নেওয়া সমীচীন নয়। আপনার কোনো বন্ধু, সহকর্মী কিংবা কাছের পরিচিত মানুষ কোনো একটা ব্যবসায় বেশ ভালো করছে, স্রেফ এতটুকু ভেবেই আপনি সেই ব্যবসাতে নেমে পড়বেন না। আপনি কেবল তাঁর ওপরের সফলতা দেখছেন, এ পর্যন্ত আসতে তাঁর লড়াইটা দেখছেন না।
তিন.
সারাক্ষণ লেগে থাকার মানসিকতা নিয়ে ব্যবসায়িক মাঠে নামলে নিজে সশরীরে উপস্থিত থেকে তদারকি করতে হবে। বিশেষত একাউন্টস-এর হিসাব ১০০% নিজেকে করতে হবে। কর্মচারী দিয়ে সম্পূর্ণ একাউন্টস পরিচালনা কোনোভাবেই গ্রহণযোগ্য নয়।
চার.
অনেকের নিয়তই এমন থাকে—ফুল টাইম অন্য কাজ করে পার্ট টাইম ব্যবসা করা। বিশেষ করে রাজনীতিবিদরা এমনটি করে থাকেন। এই থিউরি আধুনিক ব্যবসায়িক নীতিতে যায় না; রাজনীতি আর ব্যবসা এক জিনিস না। এ জন্য ব্যবসা ও রাজনীতির জন্য আলাদা করে স্বতন্ত্র সময় নির্ধারণ জরুরি। একজন আদর্শ ব্যবসায়ীকে দিনের হিসাব দিনে শেষ করার পেশাদার অনুশীলনে অভ্যস্ত হতে হয়। অবশ্য একটা পর্যায়ে ব্যবসা প্রতিষ্ঠিত হলে অন্য কাজে সময় দেওয়া যায় এবং বড়ো বড়ো ব্যবসায়ীরা অনেক কিছুই করেন।
পাঁচ.
সাময়িক ক্ষতি মেনে নিয়ে লেগে থাকতে হবে। প্রাথমিকভাবে ক্ষতি হলেও ধীরে ধীরে আয় বাড়তে থাকবে। হতাশ হওয়া যাবে না। ব্যবসা রাতারাতি বদলে যায় না। ক্ষতিও যেমন একদিনে হয় না, লাভও তেমন একদিনে হবে না। ধীরে ধীরে ব্যবসা এগিয়ে নিয়ে যাওয়াই উত্তম।
ছয়.
একদম অনভিজ্ঞ ব্যক্তির ব্যবসার মতো চ্যালেঞ্জিং মাঠে না নামাই উচিত। অন্তত ন্যূনতম অভিজ্ঞতা নিয়ে মাঠে নামা উচিত। এক্ষেত্রে সম্ভাব্য সেক্টরে কিছুদিন চাকরি করে হোক বা স্বেচ্ছায় কোনো প্রতিষ্ঠানে শ্রম দিয়ে হোক—সংশ্লিষ্ট ব্যবসার ব্যাপারে পূর্ব অভিজ্ঞতা অর্জনের চেষ্টা করা দরকার। মনে রাখা দরকার ছাত্রজীবনের সাথে বাস্তব কর্মজীবনের পার্থক্য আকাশ ও জমিন। ছাত্রজীবনে দর্শক প্রস্তুত ছিল, কেবল প্রটোকল নিয়ে গিয়ে বক্তৃতা করেছি। কিন্তু কর্মজীবনে আপনার ব্যবসার ক্রেতা প্রস্তুত করে নিয়ে তারপর বক্তৃতা করতে হবে। মাঠে সশরীরে থাকলে আপনি প্রতিনিয়ত শিখতে থাকবেন। অভিজ্ঞতার ঝুলি হবে সমৃদ্ধ।
সাত.
সততা আর উত্তম পরিসেবা ব্যবসার অন্যতম মূলধন। ব্যবসার সাথে সম্পৃক্ত সকলের সাথে প্রতিশ্রুতি ঠিক রাখা, মানসম্মত ব্যবসায়িক পণ্য/সেবা নিশ্চিত করা একান্ত আকাশ্যক। উত্তম ব্যবহারে ব্যবসা বাড়ে, খারাপ ব্যবহারে ব্যবসা কমে। পণ্য বিক্রির আগে ও পরের ব্যবহার একই হতে হবে।
আট.
নিজস্ব পুঁজি নিয়ে ব্যবসা করতে পারলে সবচেয়ে ভালো। ধার-দেনা করে ব্যবসা করা অনুচিত। নিজের টাকার যেমন মায়া থাকে, অপরের টাকায় তা থাকে না। এ জন্য নিজের মূলধন যত বেশি হবে, ব্যবসা তত দ্রুত লাভজনক হবে। অন্যের পকেটের টাকা দিয়ে কর্মপরিকল্পনা ছাত্রজীবনে সাজানো গেলেও ব্যবসার ক্ষেত্রে তা বাতুলতা।
নয়.
ধীরস্থির হয়ে ব্যবসায় শুরু করে লাভের জন্য তাড়াহুড়ো করা যাবে না। প্রথমে ভর্তুকি, তারপর সমানুপাতিক, তারপর লাভ। অনেকে লাভে আসার সাথে সাথে ১-২ বছরের মাথায় নতুন আরেকটা ব্যবসা খুলে বসেন; যা তার চলমান ব্যবসাকে ক্ষতিগ্রস্থ করে। ব্যবসা লাভে আসার পর অন্তত ৪-৫ বছর পর নতুন ব্যবসা খোলার চিন্তা করা যেতে পারে। ধৈর্য ও স্থিরতা ব্যবসার অন্যতম প্রধান হাতিয়ার। রাতারাতি বড়লোক হওয়ার স্বপ্ন পরিহার করতে হবে। ছোটো থেকে বড়ো হওয়ার মাঝেই প্রকৃত সফলতা নিহিত।
দশ.
হালাল ব্যবসায় হারাম পণ্যের ব্যবসাও হারাম। যেমন, নেশা জাতীয় পণ্যের ব্যবসা। প্রতারণাও হারাম। অহেতুক উৎকোচ প্রদান, ওয়াদা ও আমানতের খেয়ানত সবই হারাম।
এগারো.
ব্যবসায়ের পরিকল্পনা যেদিন থেকে শুরু হবে, সেদিন থেকেই প্রতিটি বিষয় লিখিত রাখতে হবে। শেয়ার হোল্ডারদের নাম ও শেয়ারের পরিমাণ, অন্যান্য অংশীদারদের অংশের পরিমাণ এবং ব্যবসায় তাদের পরিমাণ, নিয়োগ, লেনদেন, দেনাপাওনা, আয়-ব্যয়, লাভ-লোকসানের তাবত খুঁটিনাটি স্থায়ী খাতায় লিপিবদ্ধ রাখতে হবে। আপনার বিদায় বা মৃত্যু হলেও যেন পরবর্তী লোকদের হিসাব বুঝতে অসুবিধা না হয়। কোম্পানি বা গ্রুপের চেয়ারম্যান-এমডি হলেও প্রশ্নবোধক বা গোপনীয় কোনো কিছু নিজের মধ্যে রাখা যাবে না। সবকিছুই একটা প্রক্রিয়ার মধ্য দিয়ে সিদ্ধান্তের ভিত্তিতে পরিচালিত হবে।
ব্যবসায়ীক উদ্যোগ সফল করতে আরও অনেক মূলনীতি থাকতে পারে। তবে এসব নিয়ে আলোচনা আমার মূল টার্গেট না। আমার আসল উদ্দেশ্য হলো আমাদের পরিচিতি কাছের মানুষরা যেন কোনো ধরণের ধরণের বাছ-বিচার ও অভিজ্ঞতা ছাড়া কোনো ব্যবসায় নেমে না পড়ে, সে ব্যাপার সতর্ক করা। এ ধরণের উদ্যোগ কেউ নিলে তাঁকে অনুৎসাহিত করা আবশ্যক। অনভিজ্ঞদেরকে মূলধন দিয়ে সহযোগিতা করা থেকেও দূরে থাকা প্রয়োজন। অন্যথায় ওই ব্যক্তিকে ভবিষ্যতে পালিয়ে বড়ানোর জন্য আপনিও দায়ী থাকবেন। বড়ো কথা হচ্ছে, বড়ো ব্যবসায়ী ও উদ্যোক্তা হওয়ার লোভ আমাদেরকে এতটাই উন্মাদ করে দেয় যে, আমরা ব্যবসাকে সফল হওয়ার খুবই সহজ রাস্তা মনে করে বসি। আর ছাত্রজীবন শেষে কয়েক বছর কঠিন পড়াশোনা করে ভালো কোনো চাকুরির ব্যবস্থা করাকে অত্যন্ত কঠিন মনে করে বসি। এই চিন্তা ও দর্শন আমাদের চাকুরির পরিবর্তে ব্যবসার দিকে ঠেলে দিচ্ছে। নিঃসন্দেহে ব্যবসায়িক উদ্যোগ একটা দেশের জন্য খুবই প্রয়োজনীয়। দেশ ও জাতিকে এগিয়ে নিতে হলে অবশ্যই এক শ্রেণির মানুষকে ব্যবসায় এগিয়ে আসতে হবে। তবে আমার অবস্থান হলো— কোনো উদ্যোগ অথবা ব্যবসাকে সফল করতে সচেতন থাকতে হবে। উদ্যোক্তা হওয়া কোনো ছেলেখেলা নয়।
চাকুরি ও ব্যবসা নিয়ে আমাদের অবস্থান দিনদিন প্রান্তিক পর্যায়ে চলে এসেছে। এ অবস্থার জন্য আমরা বড়োরা কম দায়ী নই। আগামী প্রজন্মের সুন্দর ভবিষ্যৎ গঠনে সহায়তা করা আমাদের নৈতিক দায়িত্ব। যাদের মধ্যে যোগ্যতা ও সামর্থ্য আছে, তাদেরকে ব্যবসায়িক সেক্টরে সহযোগিতা করা উচিত। আর যাদের এই ঝুঁকিপূর্ণ কাজ করার মতো হিম্মত, যোগ্যতা ও সামর্থ্য নেই, তাদের সাবধান করতে হবে। ছাত্রজীবনে পড়াশোনা বাদ দিয়ে ব্যবসার মোহ যাদের মাথায় কিলবিল করছে, তাদের মাথা থেকে সে ভূত কিলিয়ে নামানো সময়ের অপরিহার্য দাবি।
[ এই আর্টিকেল আপনার কাছে উপকারী বিবেচিত হলে সোশ্যাল মিডিয়াতে শেয়ার করে ছড়িয়ে দিন।]
তামিম রায়হান
১৭ অক্টোবর, ২০১৯ - ১৬:৩২ অপরাহ্নভালো লাগল। দারুণ! বিষয়গুলো বিবেচনায় রাখব, ধন্যবাদ চিন্তাধারা ডটকমকে, এমন সুন্দর সুন্দর আর্টিকেল নিয়মিত পেতে চাই।
মোং সাদিক আজিজ
১৭ অক্টোবর, ২০১৯ - ১৭:৫৪ অপরাহ্নযারা আত্মকর্মসংস্থান কেন্দ্রিক টপিক লিখে, প্রায় দেখেছি তারা কোন কোনই কোম্পানি, ব্যাংক, অফিসের বড় বড় পোষ্টে। তারও কিন্তু আরেকজনের নিয়ন্ত্রনাধীন চাকরি করছে। তারা স্বপ্ন দেখে, স্বপ্ন দেখায় আত্মকর্মসংস্থান করতে। কিন্তু তারা ঝুঁকি নেয় নাহ্। চাকরি করে লাভ হলেও ক্ষতি হলেও চাকরির প্রেমেন্ট এসে যাবে, কোন ঝুঁকি নেই। ব্যবসার প্রতি উৎসহ যোগার জন্য ধন্যবাদ আপনাকে।
জিন্নুন
১৭ অক্টোবর, ২০১৯ - ১৭:১১ অপরাহ্নবাস্তবভিত্তিক পরামর্শ।আমরা সাধারণত কাঁচা পয়সা, অফুরন্ত সময় আর সমাজে উচ্চস্তরে উঠার মোহে অপরিপক্ব সিদ্ধান্ত নিই
ফারুক
১৭ অক্টোবর, ২০১৯ - ১৭:১৪ অপরাহ্নখুবই দরকারি পরামর্শ। ধন্যবাদ।
আল হেরা ইমন
১৭ অক্টোবর, ২০১৯ - ১৮:৪৬ অপরাহ্নআলহামদুলিল্লাহ। ভালো লাগল।
শামীম
১৭ অক্টোবর, ২০১৯ - ১৮:৫৯ অপরাহ্নআলহামদুলিল্লা। অভিজ্ঞতার আলোকেই লেখা মনে হলো
মোস্তাফিজুর
০৯ সেপ্টেম্বর, ২০২০ - ০৫:৪০ পূর্বাহ্নজী, বয়স কম হলেও অভিজ্ঞতায় পরিপক্ক।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক
১৭ অক্টোবর, ২০১৯ - ১৯:০২ অপরাহ্নমা-শা-আল্লাহ্ খুব সুন্দর গুছিয়ে বলেছেন, ধন্যবাদ আপনাকে।
নাছির উদ্দিন চৌধুরী
১৭ অক্টোবর, ২০১৯ - ১৯:৫৩ অপরাহ্নমা-শা-আল্লাহ্ খুব সুন্দর গুছিয়ে বলেছেন, ধন্যবাদ আপনাকে।
সুমাইয়া
১৭ অক্টোবর, ২০১৯ - ১৯:২২ অপরাহ্নজাযাকাল্লাহু খইর।
মু.সিফাতুল্লাহ গালিব
১১ সেপ্টেম্বর, ২০২০ - ২১:১৫ অপরাহ্নসুন্দর লিখুনী
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক
১৭ অক্টোবর, ২০১৯ - ২০:২৯ অপরাহ্নলেখক ও পত্রিকা কর্তৃপক্ষ উভয়কে ধন্যবাদ, শিক্ষনীয় লেখার জন্য।
এম আর করিম
১৭ অক্টোবর, ২০১৯ - ২০:০৯ অপরাহ্নলেখক ও পত্রিকা কর্তৃপক্ষ উভয়কে ধন্যবাদ, শিক্ষনীয় লেখার জন্য।
ফরহাদ হোসেন
১৭ অক্টোবর, ২০১৯ - ২২:২৪ অপরাহ্নসঠিক সময়ে সঠিক পরামর্শ, জীবনকে বদলে দেয়। ধন্যবাদ লেখককে৷
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক
১৮ অক্টোবর, ২০১৯ - ০২:১৬ পূর্বাহ্নআলহামদুলিল্লা, লেখা ভালো লেগেছে
জুয়েল
১৮ অক্টোবর, ২০১৯ - ০৩:০০ পূর্বাহ্নধন্যবাদ ভাই, সময়োপযোগী লেখা।
সুলতান
১৯ অক্টোবর, ২০১৯ - ১৯:১২ অপরাহ্নব্যবসা করলে যেমন নিজের লাভালাভের হিসাব কষতে হয়, চাকরি করলেও তা করতে হবে।-আমার বেতন পরিমাণ কাজ করছি তো? কারণ আমার কর্মসংস্থানের মালিক কিন্তু ব্যবসা করছেন। অর্থাৎ ঈমান ও সততার উপস্থিতি একান্ত কাম্য।
আরিফ শাওন
২০ অক্টোবর, ২০১৯ - ১৬:৪৭ অপরাহ্নসুন্দর ও সুচিন্তিত এই উপদেশ বাণীগুলো বাস্তবতার ভেতর থেকে তুলে আনার জন্য লেখককে অসংখ্য ধন্যবাদ। শুকরিয়া। প্রত্যেক তরুণ উদ্যোক্তার জন্য এটা পড়া জরুরি৷
মোস্তফা আযম
২১ অক্টোবর, ২০১৯ - ১২:২২ অপরাহ্ননিখুঁত আর বিস্তারিতভাবে তথাকথিত স্টার্টআপদের সম্যসা তুলে ধরার জন্য ধন্যবাদ। অধিকাংশ স্টার্টআপই এ কারণে কয়েক বছরের মধ্যে থমকে যায়।
nahid hasan
২২ অক্টোবর, ২০১৯ - ১৪:৫৯ অপরাহ্নবকে কথায় অসাধারন
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক
২৬ অক্টোবর, ২০১৯ - ১৭:০০ অপরাহ্নভাই,আপনাকে অনেক ধন্যবাদ।বর্তমান অবস্থা এবং বাস্তবতার আলোকে চমৎকার বিশ্লেষনধমী ও দিকনির্দেশনা মূলক লিখার জন্য।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক
০৮ নভেম্বর, ২০১৯ - ১৪:০৫ অপরাহ্নZazak Allahu khayran
দ্বীন ইসলাম
১৪ ফেব্রুয়ারী, ২০২০ - ০২:১৪ পূর্বাহ্নআলহামদুলিল্লাহ,, এমন সময় লেখাটা পেলাম যখন কাঁচা বা অভিজ্ঞতাহীন একটি ব্যবসার চিন্তা করছি। শুকরান, জাজাকাল্লাহ খায়ের।
ইমরান
২৬ জুলাই, ২০২০ - ২২:৩৯ অপরাহ্নআর্টিকেলটি যেন আমাকেই উদ্দেশ্য করে লেখা। শুকরিয়া...
আবদুল্লাহ
০৪ সেপ্টেম্বর, ২০২০ - ২৩:৩৭ অপরাহ্নকিন্তু অল্প সময়ের ব্যবধানে তাদের হাত মুসাফাহার পরিবর্তে উদ্যোক্তার গালে ওঠে। চোখ উঠে কপালে। তখন চোখে সরিষা ফুল নয়, আস্ত সরিষা খেত দেখতে পান। ধীরে ধীরে অন্যান্য ডাইরেক্টর ও শেয়ারহোল্ডারদের শক্তিশালী বিরোধী গ্রুপ দাঁড়িয়ে যায়। পতন শুরু হয়। অফিস-আদালত, আপ্যায়ন, চলন-বলন সবকিছুতে ভাটার টান শুরু হয়।
নাঈম
০৪ সেপ্টেম্বর, ২০২০ - ২৩:০০ অপরাহ্নঅসাধারণ পরামর্শ! জাযাকাল্লাহ
আজিম
০৫ সেপ্টেম্বর, ২০২০ - ১৪:০৪ অপরাহ্নসুন্দর পরামর্শ।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক
০৫ সেপ্টেম্বর, ২০২০ - ১৬:৪৬ অপরাহ্নসুন্দর হয়েছে।
মহি উদ্দিন
০৬ সেপ্টেম্বর, ২০২০ - ১১:০৮ পূর্বাহ্নঅসাধারন হয়েছে লেখা। তবে আমিতো গ্রামে বাস করি। এখান থেকে ব্যাবসা করার ইচ্ছা ছোট থেকেই। কোন ধরনের, কীভাবে শুরু করা যায় একটু বলে দিলে খুশি হতাম।
মোস্তাফিজুর
০৯ সেপ্টেম্বর, ২০২০ - ০৬:২৫ পূর্বাহ্নলেখক আমার খুব পরিচিত জন। একসাথে চাকরি করি । তিনি ব্যবসায় এতটাই ধরা খেয়েছেন যে, ব্যবসার কথা উঠলেই নিরুৎসাহিত করেন। তবে লেখাটি খুব ভালো লেগেছে। জীবনে অনেক অনেক কাজে লাগবে। ধন্যবাদ